সম্প্রতি লাগাতার কয়েকটি ভূকম্পনে সিলেট নগরী কয়েকবার কেঁপে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মনোমুগ্ধকর নগরী সিলেট বাংলাদেশে চা উৎপাদনের বৃহত্তর কেন্দ্র হিসেবেও সমধিক পরিচিত। প্রাকৃতিক গ্যাসও সিলেট জেলার এক অনবদ্য সম্ভার। আবার ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল হিসেবেও এই অনিন্দ্যসুন্দর নগরীটি ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি অনুভূত ভূকম্পনে সিলেট শহরসহ আশপাশের অঞ্চলে আতঙ্কে এলাকাবাসী ভীতসন্ত্রস্ত। রিখটার স্কেলের মাত্রা তত বেশি না হলেও কিছু বহুতল ভবন ও মার্কেট ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে অভিমত দেয়া হয়েছে। এমন টানা অল্প মাত্রার ছোট ভূমিকম্প বড় আকারের ভূমিকম্পের আভাস বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। বাংলাদেশ ভূকম্পন ঝুঁকির অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। সমগ্র দেশে সব জায়গায় ভূমিকম্পের মাত্রার রকমফেরে সিলেটকেই সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০১৬ সালে বিজ্ঞানভিত্তিক এক সাময়িকীর গবেষণা প্রবন্ধে উঠে আসে, ভূগর্ভে যে মাত্রায় শক্তি পুঞ্জীভূত হয়ে আছে তাতে সিলেটেই ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয় যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামেও ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূকম্পন তৈরি হওয়ার বিষয়টিও গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে বিভিন্ন নগরে প্রায় ২০ লাখ বহুতল ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে। ঢাকায় ১৩ লাখ, চট্টগ্রামে ৩ লাখ এবং সিলেটে ১ লাখ। ভবনের প্রায় ৭৫%ই ছয় তলাবিশিষ্ট কিংবা তার চেয়েও বেশি। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ভবনের বাসিন্দারা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, মেঘালয়ের শিলং থেকে সিলেট হয়ে ভুটান পর্যন্ত ভূগর্ভে যে চ্যুতি আছে তাতে অনেক শক্তি জমা হয়ে আছে। যা স্বল্পমাত্রার ভূকম্পনে বের হয়ে এসে বড় আকারের ভূকম্পনের আশঙ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্প্রতি সিলেটে ঘটে যাওয়া টানা ভূকম্পনও আরও তীব্র বড় ভূমিকম্পের আভাস দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই ভূমিকম্পের আগাম প্রস্তুতির ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সময় নষ্ট না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিলেটসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় তাৎক্ষণিক বিপর্যয়ে করণীয় যা সবই এখন শুরু করা অনিবার্য। করোনার অপ্রত্যাশিত দুর্যোগ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে যেভাবে আমলে নেয়া হয়েছে, সেভাবে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠা এলাকার ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে প্রাসঙ্গিক উদ্যোগও এখন থেকেই ভাবা জরুরী। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও মহড়া নিয়মিত চালিত করতে হবে, যাতে সমূহ বিপদকে কিছুটা হলেও সামলানো যায়। এটাকে নিয়মমাফিক চর্চা করাটাও দায়বদ্ধতা।
Leave a Reply